পোস্টকার্ড ব্লগের “ লোকায়ত কথোপকথন ” পাতাটি সবার জন্য উন্মুক্ত । লিখতে চাইলে আমাদের মেইল করে জানান । সাগ্রাহে আমরা আমান্ত্রন জানাবো। আমাদের মেইল ঠিকানা postcarduv@gmail.com। বাছাইকৃত লেখাটি পোস্ট কার্ড সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে।

মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কোটা প্রথা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা


সরকারী চাকরিতে কোটা বরাদ্ধ নিয়ে দেশে ইদানিং একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে । বাংলাদেশে সরকারী চাকরি অর্থ্যাৎ পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক গৃহীত পরীক্ষায় মোট ৫৫ % আসন সংরক্ষিত থাকে। আর বাকি ৪৫% আসন বরাদ্ধ থাকে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়াদের জন্য।

আপাত দৃষ্টিতে দেখলে ব্যাপারটা খুব অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়। কারন পৃথিবীর কোথাও কোনো প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় অর্ধেকের বেশী আসন সংরক্ষিত থাকেনা। আর বাংলাদেশের মত পরিস্থিতিতে যেখানে বেকারত্বের হার অনেক বেশী আর চাকরি যেখানে সোনার হরিণ সেখানেতো এই ব্যবস্থাটাকে রীতিমত পরিহাস মনে হয়। কিন্তু ব্যাপারটা যত সরল মনে হয় বাস্তবে ততটা নয়। কারন ৫৫% কোটার মধ্যে ৩০% কোটা বরাদ্ধ থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য। তাই এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করলে প্রথমেই মনে এই প্রশ্ন জাগে, কোটা প্রথার বিরোধিতা করা কি প্রকারন্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ্যাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই বিরোধিতা করা নয় কি?

এই বিষয়ে আলোচনার আগে ভালো করে ‍বোঝা দরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমরা আসলে কি বুঝি। ১৯৭১ এ সংগঠিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল একটি শ্রেণী বৈষম্যহীন, সমঅধিকার ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক দেশ গড়া। মুক্তিযোদ্ধারা কেউই ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা বা ভবিষ্যৎ চিন্তায় যুদ্ধ করেননি। বরং বলা ভালো দেশের জন্য তারা তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুটোকেই বিপন্ন করেছিলেন। এখন দেশের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের আলাদা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মানেই হলো মুক্তিযোদ্ধারা যে ধরনের দেশ চেয়েছিলেন তা বিপরীতে কাজ করা। অনেকে বলতে পারেন বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধারা যে ধরনের মানবেতর জীবন ধারণ করেন তাদের জন্য কি আমাদের কিছু করার নেই। এধরনের চিন্তা যারা করেন তাদের বুঝতে হবে মুক্তিযোদ্ধারা করুণার পাত্র নয়। দেশের জন্য যারা নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন আজ আমরা তাদের জন্য মাসিক ভাতা, কোটা ইত্যাদি দিয়ে যতটা না সম্মান দিচ্ছি তার চেয়ে বেশী অপমান করছি। আমরা এটা কেনো চিন্তা করি না ৪২ বছরে আমরা কেমন দেশ গড়লাম যেখানে সকলের সমঅধিকার তো দূরের কথা মুক্তিযোদ্ধাদেরই করুণার পাত্র হতে হয়।

তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শভিত্তিক দেশ গড়তে হলে দেশ থেকে এই ধরনের বৈষম্যমূলক প্রথা বাতিল করে মেধা বিকাশের সুষ্ঠ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তবেই দেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে একপা এগিয়ে যাবে। তখন দেশের আর সবার সন্তানের মত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরাও সঠিক ভাবে শিক্ষিত হয়ে যোগ্যভাবে বেড়ে উঠবে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন