প্রতিদিন না খেতে পাওয়া হাজারো শিশুর একজন |
রাজশিশু আলেকজান্ডার লুইস |
ওদিকে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম আলিয়ারায় দারিদ্র্যের কষাঘাতে পিষ্ট মা রোমেনা অভাবের তারনায় তার দুই পুত্র সম্রাট ও তাজিন কে নিয়ে পানিতে ঝাপ দিয়েছেন। ২৩ জুলাই ইফতারী নিয়ে শাশুড়ীর সাথে রোমেনার কলহ হয়,পরদিন তিনি সন্তানদের নিয়ে পানিতে ঝাপ দেন। কই, আমাদের দেশের মিডিয়া তো এই খবর টা ব্রিটিশ রাজপুত্রের আগমনের খবরের মত ফলাও করে প্রচার করলো না?
পত্রিকার পাতা খুললেই আজকাল আমরা দেখি রকমারী ইফতারীর বাজার, নানা ইফতার মাহফিলের খবর। পাশাপাশি আমরা দেখি নানা রকমারি, সুস্বাদু , উপাদেয় ইফতারের বর্ণনা। দৈনিক ৬-৭ টা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আমরা দেখি দেশের এক স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে কত রকম উপায়ে স্যুপ বানানো যায় তা বর্ণনা করতে। এর পাশাপাশি সব চ্যানেল গুলো তে বিভিন্ন তারকারা বিভিন্ন রকম ইফতারী তৈরীর প্রক্রিয়া দেখান। কিন্তু আমাদের দেশের প্রতিদিন না খেতে পেয়ে যে হাজারো শিশু মারা যায়, হাজারো মা নিজ হাতে স্বন্তান কে হত্যা করতে বাধ্য হয় তা তো কোথাও প্রচার হয় না। একদিকে মানুষ না খেয়ে মরে, অন্যদিকে আমাদের গণ মাধ্যম কোথায় কোন আহামরি ইফতার পাওয়া যায় তার খবর প্রচার করে, আর বিত্তশালীরা ছুটে যায় সেই সব ইফতার কিনতে। আমাদের গণ মাধ্যম করবে আমাদের গণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব, তা না করে এরা করছে মুষ্টিমেয় কিছু করপোরেট গোষ্ঠীর দালালি।
যেই ব্রিটিশ রাজপুত্রের জন্ম নিয়ে এত মাতামাতি সেই ব্রিটিশরাই আমাদের ২০০ বছর ধরে শাসন আর শোষণ করেছে। সেই শাসনামলেই আমরা দুই দুই বার দুরভিক্ষের স্বীকার হয়েছি। এখন তাদের নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতি কি এটাই বলে না যে আমরা আজো ওই ব্রিটিশদের নিজেদের প্রভু মানি আর তাদের চাটুকারী করি? সেই ব্রিটিশদের ভবিষ্যত শাসককে কি আমরা এখনো আমাদের ভবিষ্যত শাসক বলে মনে করি!?
ঠিক একই ভাবে বিশ্ব মিডিয়াও সমগ্র বিশ্ব জুড়ে প্রতিনিয়ত মারা জাওয়া লাখ লাখ মানুষের খবর না রেখে ব্রিটিশ রাজপুত্রের জন্মগ্রহণের সংবাদ নিয়ে মাতোয়ারা। ঠিক যেমন টা ছিল উল্লিখিত রাজপুত্রের পিতার বিয়ের সময়।
একদিকে পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে লেখক ফারুক ওয়াসিফের এমন জীবন ঘনিষ্ঠ লেখা, অন্যদিকে সেই "রাজশিশুর নাম কেন আলেকজান্ডার লুইস?" ছেপে এরা কীসের পরিচয় দিচ্ছে? এই সম্পাদকীয় কি শুধু তাহলে ধারাবাহিক ভাবে রাজশিশুর খবর প্রচারের জন্য ক্ষমা চাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রকাশ? নাকি নিজেদের মানসিক সন্তষ্টি? নাকি সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেয়ার অপচেষ্টা মাত্র? আর আমরাই বা কেন এই দুমুখো মিডিয়ার প্রচারে নীরব থাকি?
পছন্দ হয়েছে। তবে মিডিয়ার দ্বিমুখিতার কারণ সহ বিশদ লিখলে ভাল হতো । তবে মোটের উপর ভাল লেগেছে ।
উত্তরমুছুনমূলত ব্যাপারটি হচ্ছে এখোনো আমাদের মন মানসিকতা উপনিবেশীয় দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এটি হয়েছে একটি সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে তোলার অভাবে। তবে শুধু মানসিক দাসত্বকেই একমাত্র কারন হিসেবে দেখলে ব্যাপারটির গুরুত্ব ঠিক ভাবে অনুধাবন করা যাবে না। এই ধরনের মিডিয়ার প্রোপাগান্ডার পেছনে সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ লুকিয়ে আছে। যেমন একটি উদাহরন দিলেই বুঝা যাবে ব্যাপারটা্। “রয়েল বেবী” ছেলে না মেয়ে হবে তার উপর লক্ষ লক্ষ ডলারের বাজি ধরা হয়েছে। অথচ আজকালকার যুগে এ জিনিস আগে থেকে জানা কোনো ব্যাপার নয়।
উত্তরমুছুনসাম্রাজ্যবাদীদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা। আর মুনাফার জন্য প্রয়োজন খদ্দের। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে খদ্দেররা যদি বেশী বুদ্ধিমান হয় তাহলে ওদের কাছে সবকিছু গছানো যাবে না। তাই একটাই উপায় বেকুবগুলোকে বেকুবই করে রাখো। ওরা রয়েল বেবী নিয়ে মাতামাতি করে দাস মানসিকতাটাকে আরো মজবুত করুক আর আমরা আমাদের ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাই, এটাই মুনাফাখোরদের উদ্দেশ্য।
এই এই ধরনের হুজুগের আরো একটা গুরুত্ব আছে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে। উপলক্ষ্য না পেলে মানুষ কেনাকাটা করবে কেন। তাই উপলক্ষ্য তেরী করো। রয়েল বেবী, বাবা দিবস, ভালোবাসা দিবস, বন্ধু দিবস .... ওমুক দিবস, তমুক দিবস......
আমজনতাকে দিবসের গ্যাড়াকলে ফেলে মুনাফালোভী বনিক শ্রেনী তাদের নিংড়ে শুষে নিচ্ছে।